A Offbeat Destination in Sikkim – সিকিমের সিল্করুট

সিকিমের সিল্করুটে অনেকেই গেছেন এবং যাচ্ছেন। কেউ ঋষিখোলা দিয়ে শুরু করে গ্যাংটকে শেষ করেন, কেউ আরিতার হয়ে জুলুক-লুংথুঙ-নাথাঙ ভ্যালি-কুপুপ লেক দেখে ঋষিখোলা হয়ে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ফেরার ট্রেন বা বাস ধরেন।

 সিল্করুট এর আসেপাশে এখন আরো অনেক থাকার এবং দেখার জায়গা হয়ে গেছে, প্রথম চালু হবার পর যখন গেছিলাম ২০১২ সালে তখন এত  জায়গা ছিল না। আমাদের রুট ছিল ঋষিখোলা-জুলুক-লুংথুঙ-নাথাঙ ভ্যালি হয়ে নিউ জলপাইগুড়ি।

নিমাচেন-পদমচেন এসব তখন কেউ জানতো না। যতদূর মনে আছে সিলারি গাঁও এর নাম ও খুব বেশি লোক শোনেনি। এখন তো দারাগাঁও-সিলারি-রামধুরা  এইসব ছোট ছোট জায়গা গুলো দেখতে দেখতে সবাই সিল্করুট ঘুরে আসেন।

কিছুদিন আগে এক বন্ধুর পাতা ফাঁদে পড়ে দ্বিতীয় বার সিল্করুট যাওয়ার জন্য রাজি হতে হলো। এরপর আর কাজ কি, গতবার যাদের সঙ্গে গেছিলাম সেই স্প্রিংভেল রিসর্ট এর অফিসে হানা দিলাম সবাই মিলে। সিল্করুটের প্রায় সব জায়গাতেই এরা প্রথম থেকে নিজেদের লিজ নেওয়া হোমস্টে চালাচ্ছেন। পুজোর আর বেশি বাকি নেই, সব জায়গাতেই প্রায় হাউসফুল, পুরোনো পরিচয় দিয়ে কৌশিকদা, অরিজিৎ দাদের বললাম জুলুক-লুংথুঙ আর নাথাঙ ভ্যালিতে থাকবো সঙ্গে আর একটা জায়গা বলো যেখানে লোকজন বিশেষ যাওয়া শুরু করেনি।

জুলুকের অবস্থান :

পূর্ব সিকিমে হিমালয়ের কোলে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১০০০০-ফুট (৩০০০মিটার ) উচ্চতায় জুলুক অবস্থান করে। পর্যটকদের জন্য এটি একটি আকষণীয় স্থান। ইন্দো চীন সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। জুলুক প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে সৌন্দের্য্যে ভরা এডভেঞ্চার মিশ্রিত সিকিমের একটি গ্রাম। 
জুলুকের বাসিন্দারা বেশিরভাগই নেপাল থেকে আসা অভিবাসী যারা একটি উন্নত জীবনযাপনের আশায় এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছেন । 60টির বেশি  পরিবার, প্রায়  ৮০০ জন মানুষ  নিয়ে গ্রামটি। প্রকৃতি এই জায়গাটিকে পরম আতিথেয়তা এবং সরলতার সাথে ধুয়ে দিয়েছে। এখানকার মানুষ স্বভাবে সৎ, সরল ও পরিশ্রমী।
আদিম গ্রাম হিসেবে জুলুক প্রগতির রাস্তা থেকে দূরে। এইভাবে তার অনন্য নির্মলতা! স্বাভাবিকভাবেই খুব কমই কোনো হোটেল বা 5-তারকা হোটেল আছে। তবে পর্যটকদের জন্য কটেজ, সংযুক্ত বাথরুমসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। ঠাণ্ডা  কামড়ের থেকে দূরে রাখতে, রুম হিটার বা ফায়ার প্লেস দিয়ে ঘরগুলিকে আরামদায়ক করা হয়।

সিকিমের জুলুক সম্পর্কে সকলের কিছু বিষয় জেনে রাখা দরকার।

প্র : জুলুক , লুংথুঙ, নাথাঙ ভ্যালি,কুপুপ-লেক, এবং ওল্ড বাবামন্দিরের উচ্চতা কত ?

  • জুলুকের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১০,০০০-ফুট (৩০০০মিটার )
  • লুংথুঙ এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১২,৪০০-ফুট (৩৭৮০মিটার )
  • নাথাঙ ভ্যালির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১৩,২০০-ফুট (৪০২৩মিটার )
  • কুপুপ-লেকের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১৩,০০০-ফুট (৩৯৬২মিটার )
  • ওল্ড বাবামন্দিরের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১৩,১২৩-ফুট (৩৯৯৯মিটার)

প্র : জুলুক যাওয়ার জন্য কি অনুমতির দরকার হয় ?

এখানে আসার জন্য অবশ্যই অনুমতির প্রয়োজন হয়। পারমিট পেতে হলে পাসপোর্ট সাইজের ফটো আর ফটো আই-ডি প্রুফ অবশ্যই সঙ্গে রাখুন ।

প্র : জুলুকে কি খুব ঠান্ডার মোকাবিলা করতে হয় ?

অনেক উচ্চতায় এই রিজিওন টা যেহেতু তাই ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস প্রযন্ত প্রচুর তুষারপাত হয়। শীতকালে তাপমাত্রা ৪ডিগ্রী থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্র -১৫ ডিগ্রী পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে। গ্রীস্মকালে ১২ ডিগ্রী থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী পর্যন্ত হয়ে যায়।

প্র : জুলুক যাওয়ার সেরা সময় কোনটি ?

এখানে আসার সেরা সময় অগাস্ট থেকে এপ্রিল মাস। অনেক ধরণের অসুবিধার সম্মুখীন হতে না চাইলে বর্ষাকালে এখানে না আসাই ভালো।

প্র : জুলুক কি সিকিমের দর্শনীয় স্থান ?

সিকিমের সিল্করুট আর সুন্দর উপত্যাকা হিসাবে বিখ্যাত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য , বিভিন্ন লেক , আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য উপভোগ করতে হলে এখানে আস্তে পারেন।

প্র : জুলুকে কাদের যাওয়া উচিত নয় ?

হার্টের সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা যাদের আছে তাদের যাওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে চলাই ভালো কারণ প্রবল ঠান্ডা ও উচ্চতার কারণে অনেক ধরণের সমস্যা হতেই পারে।

প্র : গ্যাংটক থেকে জুলুক নিউ-জলপাইগুড়ি থেকে জুলুকের দূরত্ব কত ?

  • নিউ-জলপাইগুড়ি থেকে জুলুকের দূরত্ব প্রায় ১৩৪ কিলোমিটার , সময় লাগে প্রায় ৬ থেকে ৬.৩০ ঘন্টার মত।
  • গ্যাংটক থেকে যদি জুলুকে যেতে চান তাহলে আপনার দূরত্ব পরবে প্রায় ৯১ কিলোমিটার , সময় লাগে প্রায় ৪ থেকে ৪.৩০ ঘন্টার মত।

আমাদের সঙ্গে একজন সত্তর বছরের বৃদ্ধা থাকায় ওনারা নাথাঙ ভ্যালি বাদ দিতে বললেন, আমরা জানতাম ওনার নাথাঙ ভ্যালিতে অসুবিধা হবে না কারণ গত বছর এই সময় উনি সাঙলা-সারাহান ঘুরে এসেছেন কোনো সমস্যা হয়নি ।

হয়তো জায়গা ছিল না ওনাদের হোমস্টে গুলোতে তাই এইভাবে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। যাইহোক ওনাদের কোন কোন হোমস্টে খালি আছে দেখে শুনে ঠিক হলো দারাগাঁও-সিলারি-জুলুক-লুংথুঙ এগুলোতে এক রাত করে থাকা হবে আর বিধ্যাঙ নামে একটা জায়গা ওনারা বললেন একদম ভার্জিন পরিবেশে দুদিন থাকার জন্য।

সবকিছু ফাইনাল করে আমরা নিশ্চিন্ত মনে ফিরে এলাম। এরপর ক্রমশ দল বড়ো হতে লাগলো আর ঘরের সমস্যা দেখা দিতে লাগলো, আমরা ছিলাম ৮ জন হয়ে গেলাম ১৩ জন, কেউ আবার সব জায়গায় নিজস্ব ঘর চাই বলে সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিল। কে যেন বলে গেছিলেন যত মত তত পথ! আমাদের অবস্থাও তেমন হয়ে দাঁড়াল। 

রোজ রোজ এক আলোচনা আর ঘরের হিসাব করতে করতে দেখা গেল আমরা সময়মতো টাকা দিতে না পারায় দারাগাঁও এর ঘর গুলো হাতছাড়া হয়ে গেছে। হাজার হাজার গালাগাল আর বিভিন্ন রকম বিশেষণ দিয়েও যখন সেই আলাদা ঘর চাওয়া ‘কেউ’ টিকে বোঝানো গেল না  তখন আবার শুরু হলো নতুন করে জায়গা বাছাই এর পর্ব।

এতসব কান্ডকারখানার পর অবশেষে যা দাঁড়ালো তা হচ্ছে আমরা মোট ১২ জন যাচ্ছি (২ জন একটা দুর্ঘটনার জন্য সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিল) । সিলারিতে ২ দিন-জুলুকলুংথুঙ এই দুটো জায়গা যেহেতু আমার আগে ঘোরা তাই সেখানে একদিন করে আর বিধ্যাঙ এ ২দিন থাকব। একমাত্র বিধ্যাঙ ছাড়া সব জায়গাতেই ফ্যামিলি হিসাবে ঘর পাওয়া যাবে শুনে ‘কেউ’ ভদ্রলোকটি নিশ্চিন্ত মনে গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরলেন।

ZULUK ATTRACTION & PLACE TO VISIT | জুলুক থেকে কোথায় কোথায় যাওয়া যায় ?

  • Kalpokhari Lake
  • Gnathang Valley
  • Tukla Valley
  • Kupup Lake
  • Memencho Lake
  • Jelep La Pass
  • Nathula Pass
  • Tsomgo Lake
  • Old Baba Mandir

আমরা রওনা দিলাম অষ্টমীর দিন রাতের পদাতিক এ, আমাদের ট্যুর এর মাঝে যেহেতু বিজয়া দশমী পড়বে সেইজন্য পরিমাণ মতো রাজভোগ আর কড়া পাকের সন্দেশ নিয়ে নিলাম কাউকে কিছু না জানিয়ে। উদ্দেশ্য ছিল ওখানে গিয়ে সবাইকে সারপ্রাইস দেওয়া (আর্থিক ক্ষতির ও যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল, বিশেষতঃ খাওয়ার পর দলগত ভাবে যদি পয়সা দেওয়ার ব্যাপারটা নাকচ করে দিত), যখন পানীয় খেয়ে সবাই দিলদার হয়েছিল তখন পুরো খরচা হিসাবের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম ।

নিউ জলপাইগুড়িতে নেমে দেখা গেল সামনেই দশহরা বলে প্রচুর লোকের ভিড় এবং সেই অনুপাতে গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। সুযোগ বুঝে সবাই ইচ্ছামত দর হাঁকছে। আমাদের ২টো গাড়ি স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিল (সিল্ক রুটে একটা গাড়িতে ৬জনের বেশি নেয় না), ঝটপট মালপত্র তুলে রওয়ানা দিলাম সিলারি গাঁও এর পথে।

আমরা পরোপকারী বাঙালি সুযোগ বুঝে স্থানীয় একটি মেয়েকে গাড়িতে কালিম্পঙ অবধি ছেড়ে দিতে রাজি হলাম, আর বসালাম আমার পাশে (বাকি সবাই পরিবারতান্ত্রিক লোক বলে আড় চোখে দেখলেও কিছু বলার সাহস পায়নি)। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কালিম্পঙ প্রায় সবাই গেছেন তাই রাস্তার বর্ননা দিলাম না, রাস্তায় একটা পূর্ব পরিচিত দোকানে দাঁড়িয়ে মোমো খেয়ে আবার গাড়িতে উঠে সোজা কালিম্পঙ, রাস্তায় প্রায় সবার কপালেই নবরাত্রির টিকা লাগানো দেখলাম।

কালিম্পঙ পৌঁছে সেই সহযাত্রী মেয়েটিকে নামিয়ে দিয়ে ঋষি রোড ধরে চললাম পেডং দিকে। পেডং থেকে বামদিকে আধঘন্টা খানেক গেলেই সিলারি গাঁও পৌঁছে যাব আমরা, কিন্তু এই রাস্তাটুকু খুব সরু আর ভয়ানক রকম খারাপ।তার ওপর বৃষ্টির জলে মাটি ধুয়ে পাথর বেরিয়ে পড়েছে, কয়েকটা জায়গা বেশ বিপজ্জনক, গাড়ির চাকা স্লিপ করে যাচ্ছিল। উল্টো দিক থেকে গাড়ি এলে অনেক সময় পিছিয়ে এসে চওড়া জায়গা দেখে সাইড দিতে হয়।

সিলারি পৌঁছে সবারই খুব খিদে পেয়ে গেছিল,আমাদের ঠিক করা হোমস্টেতে নিজের নিজের ঘরে ঢুকে স্নান করে আগে লাঞ্চ করে নিলাম, তারপর আশপাশটা ঘুরতে বেরোলাম। স্প্রিংভেল এর এখানে ১৬টা ঘর আছে বিভিন্ন হোমস্টে গুলোতে। সব গুলোর বারান্দা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়, আর কয়েকটার ঘর থেকেও দেখা যায় (বেলা দুপুর হয়ে গেছিল বলে আমরা সেদিন তার দেখা পাইনি)।

একদম রাস্তার ওপর যেটা আছে তার ক্যান্টিন চালান এক বাঙালি ভদ্রলোক,নাম মনে নেই তবে পরিপাটি ব্যবস্থা ওনার। স্প্রিংভেল এর অন্য হোমস্টে থেকেও এখানে সবাই খেতে আসেন। ওনার সঙ্গে অনেক গল্প করে রাতের পার্টির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাড় করা গেল। এরপর একটু বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যা হতেই আমাদের আড্ডা-পার্টি শুরু হলো। এরপর ৯টায় ডিনার করে আবার গল্পগুজবে মাতলাম,শুতে গেলাম বেশ দেরি করেই।

পরদিন ভোর 5টায় উঠে বারান্দায় আসতেই মনটা ভোরে গেল তাকে (কাঞ্চনজঙ্ঘা) দেখে। তখনও সূর্যের আলো পড়েনি তার মাথায়, শ্বেতশুভ্র রূপে অপূর্ব দেখাচ্ছে। সূর্য ওঠার সাথে সাথে শুরু হলো কাঞ্চনজঙ্ঘায় হোলি খেলা, হলদে,কমলা,লাল রঙের খেলা চললো অনেকক্ষন ধরে। তারপর আবার সাদা রং ফিরে এলো। গরম গরম চা এর সঙ্গে এই হোলি খেলা দেখে মন খুশ হয়ে গেল। 

আজ আমরা এখানেই থাকবো তাই ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম রামতে ভিউ পয়েন্ট দেখতে (আসল কথা জঙ্গলের মধ্যে একটু হাঁটার জন্য বেরিয়েছিলাম)। ৩কিমি রাস্তা পুরোটাই জঙ্গলের পথ,নির্জন-নিস্তব্ধ,বেশ ভালো লাগে একা একা হাঁটতে,কিন্তু আমাদের তো রাবণের গুষ্টি,তার ওপর রাস্তায় প্রচুর জোঁক আছে! তাই যা হবার তাই হলো, পুরো রাস্তাতেই চিৎকার চেঁচামেচি “আমাকে জোঁকে ধরেছে”

অনেকেই জোঁকের সঙ্গে পরিচিত নয় তাই তাদের ভয়টা আরো বেশি! আমি ওদের থেকে পুরো রাস্তাতেই অনেকটা আগে আগে চলেছি কারণ অনেক কাল আগে যখন প্রথম ট্রেকিং শুরু করেছিলাম তখন পাহাড়ি লোকেদের কাছে শুনেছিলাম একদম শুরুতে যে যায় তাকে জোঁক ধরে না, তার ভাইব্রেশনে ওরা সজাগ হয় (সত্যি মিথ্যা জানি না তবে আমি এখনো এটা মেনে চলি)।

ঘন্টাখানেক কি আর একটু বেশি  লাগলো রামতে ভিউ পয়েন্টে পৌঁছাতে, পাহাড়ের মাথায় একটু খানি খোলা জায়গা, একটা উঁচু পাথরের ওপর দাঁড়ালে তিস্তা আর ঋষি নদীর সঙ্গম দেখা যায়। সিকিমের তিস্তা বাজার-মাজিটার এইসব জায়গাগুলিও চোখে পড়ে।আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে এখান থেকে (আমাদের সৌভাগ্য হয়নি), মোটের ওপর ভিউ পয়েন্টটা বেশ ভালোই।ফেরার সময় ও আমি সবার আগেই ফিরেছি সেটা বলাই বাহুল্য এবং আমাকে একটাও জোঁক ধরতে পারেনি।

রামতে ভিউ পয়েন্ট দেখে ফিরে এসে লাঞ্চ করে নিয়ে বসলাম বাঙালির আরেক প্রিয় খেলা রামি নিয়ে, দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল তাও খেলা চলতে লাগল। অবশেষে এক শুভানুধ্যায়ী এসে বললো রাম দা অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে আমাদের, না গেলে খুব রাগ করবে! সুতরাং উঠতেই হলো।

রাম দার সঙ্গে গল্প করতে করতে কোথা থেকে যেন রাত হয়ে গেল, আর খাবার ডাক পড়লো। সেদিন ছিল বিজয়া দশমী,সঙ্গে আনা রাজভোগ আর মিষ্টি গুলো বার করলাম ব্যাগ থেকে আর এক নিমেষে কোথায় যেন উড়ে গেল। আমার এই ব্যবস্থাপনায় সবাই খুব খুশি, বিশেষত সেই সত্তর বছরের বৃদ্ধা। উনি ভাবতেই পারেননি সিলারি গাঁওতে বসে উনি রাজভোগ আর জলভরা সন্দেশ খেতে পাবেন বিজয়া দশমীতে।

পরদিন আমাদের গন্তব্যঃ জুলুক, প্রায় ৮০ কিমি রাস্তা। পাহাড়ি পথে প্রায় ৩.৩০ ঘন্টা লাগবে, তারপর রংলিতে গাড়ি বদলে পারমিট করতেও সময় লাগবে। সেই মতো সকালে সূর্যোদয় দেখে ব্রেকফাস্ট খেয়ে একটু তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম কিন্তু বাধ সাধলো অন্য জায়গায়। পেডং থেকে সিলারির রাস্তায় এত ট্যুরিস্ট এর চাপ যে গাড়ির জ্যাম হয়ে গেছে। আমাদের গাড়িও সেখানেই ফেঁসে আছে, অতএব কি আর করব বসে বসে খেজুর (আলাপ)করতে লাগলাম।

অবশেষে প্রায় ১২টায় বেরোতে পারলাম সিলারি থেকে, রংলি পৌছালাম দুপুর ২টোয়, গাড়ি বদলে পারমিট বানিয়ে বেরোতে বেরোতে হয়ে গেল ৩টে রাস্তাতেই লাঞ্চ সেরে জুলুক পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। অনেক আগে যখন এসেছিলাম জুন মাসে বর্ষার সময়,তখনও জুলুকে যেমন বৃষ্টি দেখেছিলাম এবারও সেই এক অবস্থা।

তবে তখন এখানে ৩/৪ টে হোমস্টে দেখেছিলাম, এখন সংখ্যাটা দেখে চোখ কপালে উঠে গেল। ভীষণ অপরিচিত লাগল আমার এই জুলুককে, এই কয়েক বছরে এত বদলে গেল জায়গাটা! যাইহোক যার যার ঘরে গিয়ে মাল রেখে বসতে না বসতেই গরম গরম পাকোড়া আর চা চলে এলো।

আমাদের সেই আলাদা ঘর চাওয়া বন্ধুটি এখানে ঘর এর সঙ্গে লাগোয়া একটা বারান্দা পেলো পাহাড়ের ধারে, সে তো মহাখুশি! আমরাও এই সুযোগে তার পেছনে লাগার সুযোগ ছাড়লাম না। গতবার এখানে এসে এত সুন্দর খাবার পেয়েছিলাম এখনো মুখে লেগে আছে, অতো সুন্দর আর নরম রুটি আমি আজ অবধি কোথাও খাইনি। এবারও খাবার মন্দ ছিলনা তবে প্রথম প্রেম যেমন ভোলা যায় না তেমনি প্রথম বার জুলুকের খাওয়াটা এখনও ভুলতে পারিনি।

আমরা ঠিক করেছিলাম লুংথুঙ থেকে বাবা মন্দির অবধি না গিয়ে আর একটু এগিয়ে ছাঙ্গু (Tsongmo)লেক অবধি ঘুরে আসব। রংলি থেকে সেইভাবেই পারমিট করিয়েছিলাম আমরা,নাথুলার পারমিট রংলি থেকে হয়না বলে নাথুলা বাদ দিয়েছিলাম।

ছাঙ্গু (Tsongmo)লেকে লুংথুঙ হয়েই যেতে হয় তাই যাওয়ার সময় আমাদের সব মালপত্র হোমস্টেতে রেখে চললাম বাবা মন্দির হয়ে ছাঙ্গু। রাস্তায় দেখবো জিগজ্যাগ রোড, নাথাঙ ভ্যালি, টুকলা ভ্যালি, কালাপোখরি, জেলেপ লা , কুপুপ লেক, বাবা মন্দির। তারপর ওখান থেকে ছাঙ্গু লেক দেখে আবার লুংথুঙ ফিরব। এই রাস্তায় আরো অনেকগুলো ছোট ছোট পোখরি বা লেক আছে, আমাদের ড্রাইভার দাদা দেখিয়েছিল। সব গুলোর নাম মনে নেই তবে একটা মজনু লেক আর একটা মেনমেছো লেক দেখেছিলাম।

এই রাস্তার বেশিরভাগ জায়গাতেই ভারতীয় সেনার ক্যাম্প এবং বাঙ্কার আছে তাই কিছু জায়গায় ফটো তোলা নিষিদ্ধ ,কুপুপ বা এলিফ্যান্ট লেকের কাছেই ডোকালাম বর্ডার, তাই সেনাবাহিনীর সতর্ক পাহারা চোখে পড়ে, অনেক জায়গাতেই পোস্ট করে ওনারা দেশ রক্ষার গুরু দায়িত্ব পালন করে চলেছেন নিষ্ঠাভোরে।

এই দুর্গম জায়গায় ওনাদের কর্মকান্ড দেখে মনে মনে আরো একবার স্যালুট জানালাম ভারতীয় সেনাবাহিনীকে। এই লেখা যারা পড়বেন তাদের অনুরোধ করব এখানে গেলে দয়া করে কেউ বাঙ্কার এবং ক্যাম্পের ফটো তুলবেন না, এতে ওনারা অসন্তুষ্ট হন, চাইলে আপনার ক্যামেরার এসডি কার্ডটি ওনারা বাজেয়াপ্ত করতে পারেন।

ওনারা এত কষ্ট করে দেশ রক্ষা করে চলেছেন দিনের পর দিন ধরে, ওনাদের নাহয় বিরক্ত নাইবা করলাম আমরা, সাধারণ নাগরিক হিসেবে এইটুকু কর্তব্য তো আমরা পালন করতেই পারি। অনেক জ্ঞান দিয়ে ফেলেছি এবার আবার ঘোরার গল্পে ফিরি! হা সেই ভালো, এমনিতেই কোভিড এর জ্বালায় আমাদের শোচনীয় অবস্থা তার ওপর এসব গুরুগম্ভীর আলোচনায় অবস্থা আরও শোচনীয় হতে বাধ্য।

পথের শোভা এক কথায় অনবদ্য,নাথাঙ ভ্যালি দেখে এখানে না থাকার দুঃখটা আরও বেড়ে গেল। বাবা মন্দিরে যখন গেলাম তখন পুজো শেষে প্রসাদ বিতরণ হচ্ছিল, গিয়ে লাইনে দাঁড়াতেই মুঠো ভোরে প্রসাদ পেলাম-কাজু আর কিশমিশ। কুপুপ বা এলিফ্যান্ট লেক আমার ছাঙ্গুর থেকে বেশি ভালো লেগেছে কারণ ছাঙ্গু লেকের ধারে বড় বেশি ভিড় আর বেশ কিছু জায়গায় ইয়াক এর মল-মূত্র পড়ে খুব নোংরা হয়ে থাকতে দেখলাম। সেই তুলনায় কুপুপ একেবারেই ট্যুরিস্ট বিহীন, শান্ত এবং নিরিবিলি পরিবেশ এখানে।

ফেরার পথে কুপুপ গ্রামের দোকান থেকে কেউ কেউ মেমেন্ট কিনে নিল, বাড়ির জন্য,বেশিরভাগই চৈনিক জিনিস মনে হল বলে আমি কিছুই কিনিনি। এক কালে এই রাস্তা ধরে সহজেই তিব্বতে যাওয়া যেত,কত সময় লাগত, রাস্তা কেমন ছিল এইসব কথা ভাবতে ভাবতে ফিরে চললাম লুংথুঙ

GOLDEN HOUR-THAMBI VIEW POINT-LUNGTHUNG
GOLDEN HOUR THAMBI VIEW POINT-LUNGTHUNG

আগের বার যে দিদির হোমস্টেতে উঠেছিলাম এবারও সেখানেই থাকব, প্রায় ৭বছর পর আবার এলাম এখানে,আগের বার পুরো রাস্তাটাই মেঘে ঢাকা ছিল, ৬ফুট দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছিল না। এবার অনেকটাই ভালো আবহাওয়া পেয়েছি এখনো অবধি। এই হোমস্টে থেকে সামনেই বিখ্যাত থাম্বি ভিউ পয়েন্ট, কাল ভোরবেলা যদি মেঘ না থাকে তাহলে ওখান থেকে দারুন সূর্যোদয় দেখতে পাবো।

আমাদের কেউ কেউ লুংথুঙ এর খাবারের মান নিয়ে একটু অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল দুপুরে কিন্তু ভাবুন তো এই দুর্গম রাস্তায় এত ওপরে ঘুরতে এসে আপনি বসে বসে অর্ডার দিচ্ছেন আর খাচ্ছেন সেটাই কি যথেষ্ট নয়, ওনারা না থাকলেতো আজ আপনি এখানে ঘুরতে আসতে পারতেন না।

LAST LIGHT-LUNGTHUNG
LAST LIGHT-LUNGTHUNG

আপনি বলতেই পারেন ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমি পয়সা খরচ করেছি আমার অধিকার আছে বলার, তাহলে বলব অনেক ট্যুর অপারেটর (স্প্রিংভেল এর মত একটু সৎ যারা) ট্যুর বুক করার সময় কলকাতা থেকেই বলে দেন এখানে সব জায়গায় খাবারের একটু সমস্যা আছে, তাহলে জেনেশুনে এখানে এসে অভিযোগ করার কি মানে আছে? এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ঘুরতে যাওয়াটাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ বলে আমার মনে হয়।

আমরা তো আর আজন্ম ওখানে থেকে যাবো না, একদিন বা দু দিন পরেই ফিরে আসবো নিজের বাড়িতে, ওই টুকু সময় তিক্ততা না বাড়িয়ে একটু মানিয়ে নিয়ে ঘুরে আসাটাই ভালো এটা আমার ব্যক্তিগত মত। আবার একটু জ্ঞান! বাঙালি শুরু করলে আর থামতেই চায় না দেখছি! যাইহোক এসব ভুলে সন্ধ্যের আড্ডা শুরু হলো যার বেশিরভাগটাই জুড়ে রইল পরের ডেস্টিনেশন বিধ্যাঙ

যেহেতু এই জায়গাটার জন্যই আমার দ্বিতীয়বার এই রাস্তায় আসা তাই ভেতরে ভেতরে একটু চার্জড ছিলাম। আগামী ২দিনে ওখানে কি কি করব তার বিস্তারিত আলোচনা সেরে রাখলাম আমরা,সঙ্গে আকাশ পরিষ্কার থাকলে লুংথুঙ এর অসাধারণ সূর্যোদয় দেখতে আমি তো যাবই আর কে কে ভোরবেলা সেটাও জেনে নিয়ে ডিনার করে ঘুমোতে গেলাম।

পরের দিন সকালে কেউ নুডলস কেউ রুটি-সবজি দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে একরাশ উত্তেজনা নিয়ে চললাম বিধ্যাঙ এর উদ্দেশে, যেতে ঘন্টা পাঁচেক লাগবে বলল আমাদের ড্রাইভার দাদা। লুংথুঙ এর ভুলভুলাইয়া রাস্তা ধরে নেমে পদমচেনপেডং হয়ে রেল্লি রোড দিয়ে রেল্লিখোলার ওপর তৈরি মুক্তিব্রিজ পার হয়ে এক জায়গায় গাড়ি থামলো নদীর ধারে।

রাস্তা এখানেই শেষ, বাকি পথটুকু হেঁটে যেতে হবে ঝুলন্ত ব্রিজ পেরিয়ে। আগেই বলেছি আমরা দুটো গাড়ি নিয়েছিলাম লোক বেশি বলে, তাই দ্বিতীয় গাড়ির অপেক্ষায় কয়েকজনকে বসিয়ে রেখে আমি আর একজন চললাম আমাদের কটেজে খবর দিতে সব মালপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য।আগে আগে ওই ঝুলন্ত ব্রিজ পেরিয়ে যাওয়ার জন্য জীবনে একটা বিরাট সার্কাস দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম এই আফসোস আমার জীবনে যাবে না।ঘটনাটা পরে যেমন শুনেছিলাম হুবহু লিখে দিচ্ছি।

দ্বিতীয় গাড়ি আসার আগেই আমাদের গাড়ির দুজন মহিলা আর একজন পুরুষ কটেজের দিকে হাঁটা শুরু করেন। এইরকম ঝুলন্ত ব্রিজ পার হবার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে ব্রিজে উঠেই মহিলাগণ কাঁপতে শুরু করেন, একজন ওই ছেলেটির হাত ধরে কোনোমতে এপারে আসতে শুরু করেন, ঠিক সেই সময় ওই ছেলেটির অর্ধাঙ্গিনী তার পিছনে স্ট্যাচু অবস্থায় থেকে যান।

ছেলেটি যখন বুঝতে পারেন তার স্ত্রী পাশে নেই তখন পিছনে ঘুরে দেখে স্ত্রী তখনও স্ট্যাচু অবস্থায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। এই মনোরম দৃশ্য না দেখতে পাওয়ার জন্য পরে সবাই খুব আফসোস করেছিলাম। লেখাটা অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে তাই বিধ্যাঙ এর কথায় আসি, চারিদিকে পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা একটা ছোট্ট উপত্যকা হল এই বিধ্যাঙ। লেখা দিয়ে ভালো মতো বোঝাতে পারব না কি অপূর্ব সুন্দর এই বিধ্যাঙ! তাই ফটো দেখেই বুঝে নেবেন যারা লেখাটা পড়বেন। 

রেল্লিখোলার একদম ধরে অনেকটা জায়গা নিয়ে কটেজগুলো তৈরি হয়েছে, সঙ্গে আলাদা খাবার এবং বসার জায়গা, কেউ গান গাইতে চাইলে হারমোনিয়াম এবং তবলা রাখা আছে, খেলার জন্য সামনে ছোট্ট মাঠ আছে, এককথায় বেশ ভাল ব্যবস্থা। পুরো দিন আমরা এখানে রিলাক্স করলাম, রাতে  চিকেন তন্দুরি হবে ঠিক করা ছিল, সেই মতো সন্ধ্যা নামতেই আয়োজন শুরু হলো, কেউ কেউ একটু তবলাও পিটিয়ে নিল সুরের তোয়াক্কা না করেই।

তারপর খোলা মাঠে শুরু হল তন্দুরি সহযোগে জলযোগ এবং গল্পগুজব, পরের দিনটাও আমরা এখানেই থাকব তাই অনেক রাত অবধি চলল হইহল্লা, অবশেষে ডিনার এবং ঘুম। বিধ্যাঙ জায়গাটা পাখির স্বর্গরাজ্য সেটা ওখানে পৌঁছেই বুঝেছিলাম, তাই রাতে দেরি করে ঘুমালেও ভোরবেলা উঠে পড়লাম পাখির ছবি তুলব বলে, বেশ কিছু ছবি তুলেওছিলাম। এরপরের কর্মসূচী পুরি-সব্জি আর অমলেট দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নদীতে স্নান।

রেল্লিখোলার কনকনে ঠান্ডা জলে নামার আগে সবাই একটু শরীর গরম করে নিলাম তারপর গা ডোবালাম নদীর জলে। স্নান করতে করতে মনে হচ্ছিল কোনো স্বপ্নের দুনিয়ায় চলে গেছি বুঝি।

এখানে একটা কথা বলে রাখি নদীতে স্নান করতে করতে অল্প স্বল্প ড্রিংক করেছি আমরা যেটা শুধুমাত্র সময়টা উপভোগ করার জন্য, এবং সমস্ত কিছু একটা ব্যাগে ভোরে কটেজের ডাস্টবিনে ফেলেছি, একটা টুকরো চিপসের প্যাকেটও নদীর ধারে ফেলে আসিনি, এইটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি বলে মনেহয় ব্যাপারটা কেউ অন্যভাবে নেবেন না।

যেখানেই ঘুরতে যাই আমরা মজা করার উদ্দেশ্যে যাই, সবাইকে অনুরোধ করব একটু সচেতন ভাবে খাওয়াদাওয়া করলে প্রকৃতিকে আমরা দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো। বিধ্যাঙ এর গল্পের এখানেই ইতি টানলাম, বাকিটা সবাই গিয়ে নিজের চোখে দেখে আসুন, আরও ভালো লাগবে।

 স্প্রিংভেল এর ব্যবস্থা বেশ ভালো, আপনারা যেতেই পারেন। এছাড়াও সিল্করুটের অজস্র ট্যুর অপারেটর আছেন, তাদের সঙ্গেও যেতে পারেন কিন্তু বিধ্যাঙ বুক করার জন্য তারাও স্প্রিংভেলকেই যোগাযোগ করবেন। প্রসঙ্গতঃ বিধ্যাঙ এ নদীর এপারে যেখানে গাড়ির রাস্তা শেষ হয় সেখানেও একটি ছোট্ট প্রাইভেট কটেজ আছে কিন্তু ওপারে সব কটি স্প্রিংভেল বুক করে। তাই অন্য কারুর সঙ্গে গেলে আপনাকে একটু বেশি টাকা খরচ করতে হবে বিধ্যাঙ বুকিং এর জন্য, যেহেতু আপনি অন্যজনের ভায়া বুক করছেন। আরও বিশদে জানতে আমাদের যোগাযোগ করতে পারেন অথবা সরাসরি স্প্রিংভেল এর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।

How to Reach ZULUK ?

বিমান দ্বারা : বাগডোগরা নিকটতম বিমানবন্দর। জুলুকে পৌঁছানোর জন্য প্রায় 6½ থেকে 7 ঘন্টার গাড়ি চালাতে হয়।।

রেলপথে : পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশনটি সবচেয়ে কাছের রেলওয়ে স্টেশন। প্রায় 6 থেকে 6½ ঘন্টা ড্রাইভ করে জুলুক পৌঁছাতে হয়।

সড়কপথে : নিউ জলপাইগুড়ি থেকে প্রায় 6-6½ ঘন্টার মধ্যে বিভিন্ন ভাড়ার গাড়িতে জুলুকে পৌঁছানো যায়। গাড়ি ভাড়া করে প্রায় 4 থেকে 4½ ঘন্টার মধ্যে গ্যাংটক থেকে জুলুকে যেতে পারেন।

Accommodation in Zuluk :

নিরিবিলি হওয়ার কারণে এই রিজিয়নে থাকার জন্য হাতে গোনা কয়েকটি ব্যবস্থা আছে। হোমস্টে বা রিসোর্টে থাকতে পারেন। তবে আমি বলবো এই টোটাল এরিয়া কভার করবার জন্য প্যাকেজ টুর করাই ভালো। যেহেতো আমি ২বার এদের সাথে এসে খুব আনন্দ উপভোগ করেছি তাই আমি বলবো মোটামুটি কম বাজেটে আপনি Spring-Vale-Resorts এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
স্প্রিংভেল এর যোগাযোগ : কৌশিক-9830689177 , অরিজিৎ দা : 9830147718 (https://www.springvaleresorts.in)

Best time to visit Zuluk :

উচ্চতা বেশি হওয়ার জন্য জুলুক বছরের বেশিরভাগ সময়ই শীতল থাকে। শীতকালে আবহাওয়া খুব ঠান্ডা থাকে। গরমকালে আরামপ্রবণ আবহাওয়া তবুও গরম কাপড় নিয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। বর্ষার সময় প্রবল বৃষ্টিপাত হয় তাই এইসময়টা এড়িয়ে চলাই ভালো।

  • এপ্রিল থেকে জুন মাস : জুলুকের ঘেরা উপত্যাকায় বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের প্রাণবন্ত দৃশ্যের সম্মুখীন হতে হলে এপ্রিল থেকে জুনের প্রথমে আসা ভালো। এই সময় পরিষ্কার আকাশের কারণে তুষারাবৃত্ত পর্বত শৃঙ্গের দেখা মেলে।
  • জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর : জুলুকে এই সময় মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের সাথে কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে তাই এইরকম আবহাওয়ার জন্য বরফের ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন ।
  • অক্টোবর থেকে মার্চ : অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে জুলুকের আবহাওয়া অবর্ণণীয় সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। ডিসেম্বরের লাস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত জুলুক বরফের সাদা কম্বলের নিচে থাকে। এই সময় তুষারাবৃত হিমালয় পর্বতমালা পরিদর্শনের সেরা সময় বলে ধরা হয়। যারা তুষারপাত দেখতে ভালোবাসেন তারা এইসময় আস্তে পারেন।

2 thoughts on “A Offbeat Destination in Sikkim – সিকিমের সিল্করুট”

Leave a Comment