উত্তরবঙ্গ বরাবরই দুর্বলতার জায়গা আমার। যখনই চার -পাচঁ দিনের সময় পাই তখন ছুটে চলে যাই। আমি একজন গৃহবধু , চার পাঁচ দিনের ছুটি বলতে আমার পুত্রের স্কুলের ছুটি আর সাথে যদি হাসব্যান্ডের কাজের ছুটির মিল হয়ে যায় তাহলে আর দেখতে হবে না।
২০১৯ সাল ২৫ শে মে (শনিবার ) ছেলের গ্রীস্মকালীন ছুটিতে ঠিক হলো দুই ফ্যামিলি মিলে অফবিট কোনো জায়গা যাবার। দুই ফ্যামিলি বলতে আমার আর আমার দিদির ফ্যামিলি , ছোট-বড় মিলিয়ে সাত জন ( ছোট ৩ জন ) । আমাদের ঠিক হলো সিটং (Sittong) আর চটকপুর (Chatakpur) ভ্ৰমণ করবার, এই জায়গাগুলোতে হোমস্টের চল বেশি আর হোমস্টে মানে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা , এই দুটোই দার্জিলিং জেলায় অধীনে।
সিটং যাবার কারণ হল কমলা লেবুর বাগান বা গ্রাম দেখা। সিটং দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং মহকুমার একটি শান্ত ও শান্তিপূর্ণ গ্রাম। আর চটকপুর যাবার কারণ হল ঘন অভায়ারণ্য আর কাছথেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা কে দেখা ,যদিও কাঞ্চনকে দেখার সৌভাগ্য মে মাসে হবে কিনা জানি না তবে পাহাড় বারো মাসই আলাদা আলাদা রূপ ধারণ করে সেটা চোখ দিয়ে দেখা আর অনুভব করা থেকে কে ই বা বঞ্চিত হতে চায় ।
রাত ১১.২০ তে শিয়ালদাহ থেকে পদাতিক এক্সপ্রেসে শুরু হলো আমাদের যাত্রা। পরদিন সকাল ৯.২০ তে নিউ জলপাইগুড়ি পৌছালাম , ট্রেন একদম রাইট টাইমে স্টেশনে পৌছালো। শুরুটা যখন ভালোই হল তাই মনে হল পুরো যাত্রাটা ভালোই হবে।
আমাদের গাড়ি আগেভাগেই ঠিক করা ছিল। শিলিগুড়ি থেকে সিটং এর দূরত্ব মোটামুটি ৫০ কিলোমিটার ব্রেকফাস্ট টাইম বাদ দিয়ে আরও ২ ঘণ্টার মতো পৌঁছাতে সময় লেগে গেল।
একটা জিনিস বলেই রাখা দরকার সিটং (Sittong) যেহেতু অফবিট জায়গা তাই ডাইরেক্ট গাড়ি পাওয়া খুব মুশকিল। আমাদের প্রথম গন্তব্য সিটংএর বিশেষ হোমস্টেতে। এখানে আমাদের ২ রাত বরাদ্দ। বিশেষ হোমস্টের মালিক বিক্রম রাই (ভদ্রলোক এক কথায় অসাধারণ মানুষ ) গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে ছিলেন এন.জে.পি স্টেশনে, আমাদের ট্রেন স্টেশনে আসার পূর্বেই । গাড়ির ড্রাইভার রাকেশ আমাদের খুব সুন্দরভাবে ওয়েলকাম করলো।
গাড়িতে যাত্রা শুরু করবার একঘন্টা পর আমাদের তিন খুদে পর্যটকদের আবদারে ব্রেকফাস্ট সেরে নিতে হল পাহাড়ের পাদদেশে এক প্রসিদ্ধ রেস্টুরেন্টে পাহাড় প্রসিদ্ধ মোমো দিয়ে।
সিটং যাবার পথটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা , রাস্তার বেশিরভাগ টা সিমলা যাবার রাস্তার মতো ঝাউগাছে আচ্ছাদিত। প্রত্যেকটা বাঁকে একটা অন্যরকমের আকর্ষণ আছে , কোনো কোনো বাঁক থেকে পাহাড়ের রানী উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। আর হটাৎ হটাৎ করে পাহাড়ের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে তাই মেঘের আনাগোনা-টাও এই পথে অনেক বেশি। বর্ষার শুরুতে বলে মেঘের ঘনত্ব অনেকটা বেশি আর চারিদিক সবুজায়নে ভরা । কিছুটা এগোতে শুরু হলো বৃষ্টি , এদিকে অন্য পাহাড় গুলোয় রোদের ঝলকানি দেখতে পাওয়া যাচ্ছিলো। রোদ আর বৃষ্টি দিয়ে আমরা সিটং-এর বিশেষ হোমস্টেতে পৌছালাম দুপুর ১.৩০ নাগাদ। সমুদ্রাপিষ্ট থেকে সিটং এর উচ্চতা মাত্র ৪০০০ ফুট হলেও গাড়ি থেকে নামতেই ঠান্ডাটা বেশ অনুভব করলাম।
অভ্যর্থনা পর্ব শেষ করে আমাদের লাগেজ পৌঁছে দেওয়া হলো ঘরে। হোমস্টেটা যেমন সুন্দর তেমনই রুমগুলো সুন্দর করে সাজানো। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দারুন ভাবে দেখা যায় সেটা শুনে ছিলাম কিন্তু তখনও প্রযন্ত কাঞ্চন আমাদের দেখা দেয়নি কারণ ঘন মেঘ হোমস্টেয়ের ওপর দিয়ে বয়ে চলছিল। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। আমরা দুপুর ৩টায় লাঞ্চ সেরে সিটং পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়ি। এখানে বুফেতে খাবার সিস্টেম তাই যত-পারো তত খাও, সিস্টেম টা দারুন না ! রান্নার মানও বেশ ভালো। ক্লান্ত ছিলাম তাই বেশিদূর নাগিয়ে তাড়াতাড়ি রুম এ ফিরলাম।
একটু রেস্ট এর পর দেখি সন্ধ্যার স্ন্যাক্স আর চা এসে হাজির। সন্ধ্যায় পাহাড়ের অন্ধকার সকলেরই জানা, দূরে জোনাকির আলোর মতো টিমটিম করছে পাহাড়ের আলো গুলো। ঠান্ডাটা একটু বেশি উপভোগ করতে অন্ধকারে বেরিয়ে পড়লাম। বেশিক্ষন বাইরে থাকা মানা কারণ রাত ৮.৩০ থেকে ৯.৩০ এর মধ্যে ডিনার পর্ব শেষ হয়ে যায় তাই , অগত্যা তাড়াতাড়ি ফিরতে হলো।
লাঞ্চ আর ডিনারে হরেকরকম খাবারের পদ , সন্ধের স্নাক্সে চা ,পকোড়া (ভেজ বা নন-ভেজ ) বা মোমো (ভেজ বা নন-ভেজ ) , মর্ণিং এর টা মর্নিং এ বলতে পারবো। খাবারের স্বাদ নিয়ে কোনো কথাই হবে না জাস্ট অসাধারণ সাথে খাবার জায়গাটিও। আমরা ডিনার পর্ব শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেলাম কারণ পরের দিন সকাল সকাল সাইটসিনে বেরোবো।
আজ সোমবার (২৭শে মে) ভোর ৪ টায় উঠলাম এমনিতে পাহাড় এ তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায় , তাড়াতাড়ি ওঠবার কারণ হলো কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখব বলে, দেখা হলো না ঘনমেঘের আনাগোনা অনেক ছিল।
সকাল ৬টা প্রজন্ত চুপ করে তাকিয়েই বসে থাকলাম, ফল পেলাম না। হোমস্টের ঘর থেকেই কাঞ্চনকে দেখা যায় পজিশনটা খুব ভালো জায়গায়। অক্টোবর শেষ থেকে ফেব্রুয়ারী মার্চ প্রজন্ত ভালোভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন হয় এই হোমস্টে থেকেই ।
হোমস্টের ডানদিকে অনেকটা জায়গা জুড়ে বড়ো-ছোটদের খেলার গ্রাউন্ড করা আছে সেখানে ব্যাটমিন্টন নেট সাথে সেটও রেডি করা। মনেহচ্ছে সন্ধ্যাটা এই গ্রাউন্ডে ভালোই কাটবে।
গ্রাউন্ড-এ একটু গা-ঘামিয়ে স্নান পর্ব সেরে রেডি হয়ে নিলাম সাইটসিনে যাবো বলে। ব্র্যাকফাস্টে পুরি, নান , মটর-পানির , আলুদম , আচার আর সাথে চা রেডি , যত পারো তত খাও…. হা হা হা হা ……..।
যে ছেলেগুলো পরিচর্চার জন্য সবসময় আমাদের সাথে সাথে থাকছে তাদের সম্পর্কে তারিফ না করে থাকা যায় না , ওদের ব্যবহার অত্যন্ত ভালো আর খুবই হেল্পফুল। সাইটসিনে অনেক কিছুই আছে সেগুলো ভালোভাবে কভার করতে হলে ৪ দিন আরও সময় দিতে হবে।
সিটংএর কাছাকাছি আকর্ষণীয় জায়গাগুলি নিম্নলিখিত :
- নামথিং লেক – প্রকৃতি এই প্রাকৃতিক হ্রদকে চারপাশে সবুজ গাছ দিয়ে সজ্জিত করে রেখেছে। এখানে বিরল প্রজাতির সালামান্ডারও প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।
- স্টিল ব্রিজ যোগীঘাট – প্রাকৃতিক সৌন্দের্য্যে ঘেরা একটা পয়েন্ট যেখানে সেতুটি সিটং আর মংপুকে যুক্ত করেছে – একসময় এই গ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বাড়ি ছিল।
- মংপু – কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারা বিখ্যাত এই পার্বত্য স্টেশন। কবি ঠাকুরের অন্যতম গন্তব্য হিসাবে এটি জনপ্রিয়, একসময় এই মঙ্গপুগ্রামে কবির একটি বাড়ি ছিল এখন সেটি দর্শনীয় স্থান। মংপুতে নিজস্ব কোনও পর্যটক থাকার ব্যবস্থা নেই।
- কমলালেবুর ভিলেজ – নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারী মাসে কমলালেবুগুলো পরিপুষ্ট হয়। সিটং দেশের সেরা কমলাগুলির বৃদ্ধি করে। আপনি যদি আপনার প্রতিদিনের রুটিন থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বিরতি চান , প্রকৃতির অনুগ্রহের মাঝে পরিবারের সাথে যদি সময় কাটাতে চান তবে এই উদাসীন ছোট্ট গ্রামটিতে আসুন কথাদিচ্ছি আপনি হতাশ হবেন না।
- আহালদারা ভিউ পয়েন্ট – এই অবস্থানটি একদিকে ডুয়ার্স এবং তারই সমভূমির ৩৬০ ডিগ্রি প্যানোরামিক দৃশ্য , অন্যদিকে কালিম্পং, দার্জিলিং এবং সিকিম পর্বতমালা উপস্থাপন করে।
- লাটপাঞ্চার – পক্ষী প্রেমীদের কাছে খুবই সুখবর। রুফস নেকড হর্নবিল সহ এ অঞ্চলে ২০০ টিরও বেশি প্রজাতির পাখি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে । অন্যান্য সাধারণভাবে দর্শনীয় পাখির মধ্যে রয়েছে ব্লু হুইসলিং থ্রাশ, মিনিভেট, সানবার্ডস, উডপেকারস, বুলবুল, দ্রঙ্গো, কিংফিশার, ফ্যালকন , বাকি নাম মনে রাখা আমার কাছে খুবই দুস্কর।
কাছের অঞ্চল থেকে দূরত্ব ( Distance from the nearby area )
- দার্জিলিং – ৩৫ কিমি
- কালিম্পং – ৫৪ কিমি
- কার্সিয়ং – ২০ কিমি
- লাটপাঞ্চার – ২৫ কিমি
- চটকপুর – ৩০ কিমি
- নামথিং লেক – ২০ কিমি
- আহালদারা – ৩২ কিমি
- মংপু – ৪০ কিমি
- যোগীঘাট – ৩২ কিমি
সিটং থেকে উপরিউল্লেখিত পয়েন্ট ছাড়াও আরো অনেক পয়েন্ট আছে । বিক্রমবাবুর পুত্র আমাদের জন্য সুমো ঠিক করে দিয়ে ছিল, প্রথম পাঠের জন্য ১০০০ টাকা আর দ্বিতীয় পাঠের জন্য ১২০০ টাকা। সকালের দিকটা আমরা যাব স্টিল ব্রিজ যোগীঘাট ও মংপু আর লাঞ্চের পর আহালদারা ভিউ পয়েন্ট।
যোগীঘাট পৌঁছে কিছু ফোটোগ্রাফি করলাম পরিবার নিয়ে। পরিবেশ টা প্রাকৃতিক সৌন্দের্য্যে মাখামাখি। অনেকটা সময় কাটানোর পর মংপুর উদ্দেশে রওনা দিলাম । রাস্তার মধ্যে চা এর একটু বিরতি নিয়ে ৪৫ মিনিট পর মংপু পৌছালাম। পরিবেশটা একদম আলাদা চারিদিক নিস্তব্ধতা বিরাজমান। শুনেছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করতেন তাই হয়তো আশেপাশের সিঙ্কোনা বাগানের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়েছিলেন আমার মনে হয় আপনারাও জায়গাটির পতি নিশ্চই আকৃষ্ট হবেন।
আপনারা দেখতে পাবেন ওনার চেয়ার এবং ডেস্ক যেটি তিনি ব্যবহার করতেন লেখার জন্য , ঠাকুরের খাওয়ার জায়গা এবং তিনি যে বিছানা ব্যবহার করেছিলেন সেগুলিও। ১৯৪০ সালে তিনি এখানে স্থানীয় মানুষের সাথে তাঁর দ্বিতীয়-শেষ জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন। ঠাকুরের পাহাড় খুব পছন্দের ছিল তাই তিনি বার বার পাহাড়ের এই বাড়িতে ফিরে আসতেন , আর থাকার জায়গাগুলির মধ্যে মংপুর বাড়িটি অন্যতম ছিল।
প্রায় এক ঘন্টা এখানে কাটিয়ে ১.৩০ নাগাদ বিশেষ হোমস্টেতে ফিরলাম। ঝটপট লাঞ্চ সেরে আহালদারা ভিউ পয়েন্ট এসে পৌঁছাতে বিকাল ৪ তে বেজে গেল। ভিউ দেখে চক্ষু ছানাবড়া। মনে হল সকালবেলায় এখানে আসলে ভালো করতাম যেমন টি শুনেছিলাম ঠিক তেমনটি, ডুয়ার্স এবং তারই সমভূমির ৩৬০ ডিগ্রি প্যানোরামিক দৃশ্য। অন্য দিকে কালিম্পং, দার্জিলিং এবং সিকিম । সন্ধ্যা নেমে এসেছে আর সাথে বর্ষার মেঘের ঘনত্ব এতবেশি তাই ভালোকরে কিছুই ঠাওর করতে পারলাম না।
ফিরে আসতে ৬.৩০ বেজে গেল। আজ সকলেই ক্লান্ত, তারপরেও ছোটরা ব্যাটমিন্টন খেলতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো , আমরা বড়োরা আমাদের রুম-এর সামনে সুন্দর বারান্দায় বসে সন্ধ্যার প্রকৃতি আর ভেসে আসা বর্ষার মেঘ গায়ে লাগিয়ে উপভোগ করতে লাগলাম চিকেন পকোড়া আর চা-এর সাথে।
সকালের সুমোর ড্রাইভার কে ডেকে একপ্রস্থ আলোচনা সেরে নিলাম পরেরদিনের জন্য। আজ সিটংএ শেষ রাত্রি। কাল আমাদের অরণ্যের মধ্যে দিয়ে চটকপুরের যাত্রা । আজ যে গাড়ীতে গেছিলাম সেই গাড়িটাই আমাদের চটকপুর প্রজন্ত ঠিক হলো ২৫০০ টাকায়। জঙ্গলের রাস্তা খারাপ নাহলে ২২০০ তে হয়ে যেত। রাস্তা বেশি নয় ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটারের এর মধ্যে , সময় লাগে ২ ঘন্টার মতো । চটকপুরের উচ্চতা ৭৫০০ ফুট এর কিছু বেশি তাই ঠান্ডাও অনেক। পাহাড়ের সব মানুষই ভালো মনের মানুষ হয় তাই এই ছেলেটিও তার ব্যাতিক্রম ছিল না। ওর সাথে পাহাড়ের গল্প করতে করতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল সাথে ক্লান্তিও অনেকটা দূর হল।
রাতের হোমস্টের আশপাশটা হেটে বেড়াতে বেশ ভালো লাগছিলো ৯ টা বাজতেই ডিনারের জন্য ডাক পরে গেল। আবার সেই বুফেট সিস্টেম আজ ছিল দেশি চিকেন কারী , রুটি , জিরা রাইস , এগ কারী , মিক্সড সবজি , আলুভাজা , ডাল ,পাঁপড় , চাটনি, যত খুশি তত। ডিনার সেরে আজও তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে গেলাম কারণ কাল যদি কাঞ্চন এর দেখা পাই তাই। এমনিতেই কাল তাড়াতাড়ি উঠতে হবে তাই আজ গোছগাছটা করে রাখাই ভালো।
আজ মঙ্গলবার ঘুম থেকে উঠলাম ভোর ৪.৪৫ এ , একটু দেরি হয়ে গেল। আগের দিনের মতোই পুনারাবৃত্তি হলো আকাশের মুখ বেশ ভার , কাল রাত থেকে হালকা ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল ঘুমাতে ঘুমাতে শুনতে পেয়েছিলাম। সকাল বেলায়ও হাল্কাবৃষ্টি হচ্ছিলো তাই বুঝে গেছিলাম আজও ভাগ্য খারাপ। কাঞ্চন এর কষ্ট ভুলে রেডি হতে শুরু করলাম পরের গন্তব্যতে পৌঁছানোর জন্য। বিশেষ হোমস্টেতে ২দিন থেকে টুরিস্ট বলতে আমরা ছাড়া ২টো পরিবার ছিল, এক ফ্যামিলি কলকাতার ওপরটা বাঁকুড়ার। আলাপ পরিচিতি আগেই সেরে নিয়েছিলাম।
সকাল ৯ টার মধ্যে সকলেই রেডি , গাড়িও ইতিমধ্যে চলে এসেছে , আমরা তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। হোমস্টের ওনার বিক্রম রাই আমাদের দারুণভাবে বিদায় জানালেন সাথে ওনার পুরো ফ্যামিলি উপস্থিত ছিলেন। বিক্রম বাবু বললেন ডিসেম্বরে সিটং আসতে কমলালেবু আর কাঞ্চনজঙ্ঘা ২ জনের ই দেখা মিলবে। তবে আমায় বর্ষার পাহাড় বেশি আকৃষ্ট করে , চারদিকে মেঘ হালকা -ভারী বৃষ্টি আর সবুজায়ান থাকে বলে। ৯.৩০ টার সময় আমরা রওনা দিলাম চটকপুরের উদ্দশ্যে।
পরের ব্লগ এ চটকপুর …
আপনাদের সুবিধার্তে একটা ভিডিও লিঙ্ক শেয়ার করলাম আশাকরি উপকৃত হবেন।
Credit & Contact Information :
This Sittong Bisesh Homesyay (Darjeeling) youtube video was created at Sittong Productions.
-: সিটং যাবার সেরা সময় :-
গ্রীস্ম কাল :
সিটং আপনি সারা বছরই আসতে পারেন। বিভিন্ন ঋতুতে সিটংএর ভিন্ন ভিন্ন রূপ। মার্চ থেকে মে এর প্রথম সপ্তাহ প্রজন্ত আস্তে পারেন প্যাচপ্যাচে গরম থেকে বাঁচতে আর কিছু ফুলের বাহার দেখতে। প্রায় সব হোমস্টের আঙিনা ছেয়ে থাকে রংবেরঙের ফুলে।
বর্ষা কাল :
যারা কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখার জন্য যেতে চান তাদের বর্ষা কাল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। ঘোলাটে আকাশ আর মেঘে ঢাকা থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ। যারা সবুজ প্রকৃতিপ্রেমী তারা সিটং আসতেই পারেন।
শীত কাল :
কাঞ্চনজঙ্ঘার পূর্ণরূপ দেখতে হলে অক্টোবরের শেষ থেকেই ফেব্রুয়ারীর শেষ , আর কমলালেবুর গ্রাম দেখতে হলে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী।
-: সিটংএ মাস অনুযায়ী আবহাওয়ার পূর্বাভাস চিত্র :-
-: কি করে পৌঁছাবেন :-
আকাশ পথ :
প্লেনে করে বাগডোগরা এসে সেখান থেকে সিটং যাওয়ার গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। সবথেকে ভালো সিটং যেহেতু অফবিট এরিয়া তাই হোমস্টের সাথে কথা বলে গাড়ি ঠিক করে নেওয়া।
ট্রেন পথ :
নিকটতম রেলস্টেশনটি হল নিউ জলপাইগুড়ি (এন.জে.পি.) , সিটংএ যে হোমস্টেতে থাকবেন সেই হোমস্টের সাথে কথা বললে ওরা আগে ভাগে এন.জে.পি.স্টেশনে গাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
সড়ক পথ :
আপনি শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়ং পর্যন্ত শেয়ার জিপ পেতে পারেন এবং তারপরে লোকাল গাড়ি বা ট্যাক্সিতে করে সিটংয়ে যেতে পারেন। যদি বেশি ঝামেলায় না যেতে চান হোমস্টের সাথে কথা বলুন , ওনারাই গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবেন। গাড়িভাড়া ২৫০০ টাকা থেকে ২৭০০ টাকার মধ্যে নেয়।
-: কোথায় থাকবেন :-
প্রকৃতির অনুগ্রহের মাঝে পরিবারের সাথে যদি সময় কাটাতে চান তবে এই উদাসীন ছোট্ট গ্রামটিতে আসুন কথাদিচ্ছি আপনি হতাশ হবেন না। সিটং শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ হলেও অনেক হোমস্টে পাবেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা সবগুলো থেকে দেখা যায় কিনা বলা মুশকিল । আমাদের হোমস্টেটা ছিল অনেকটা ওপরের দিকে তাই দায়িত্বনিয়ে বলতে পারি বিশেষ হোমস্টে থেকে কাঞ্চনের ফুল রেঞ্জ পাবেন এমন কি ঘরের মধ্যে থেকেও।
বিশেষ হোমস্টেতে রুমের সংখ্যা ৮ এর অধিক, তাও আগে থেকেই বুক করে নেওয়া ভালো। মাথা পিছু রেট নিয়ে থাকে প্রতিদিন হিসাবে , ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার প্রযন্ত দাম ধার্য করা থাকে। বড়োদের জন্য ১২৫০ টাকা , ছোটদের জন্য (৫ বছর প্রযন্ত ) ৭০০ টাকা। (সময় অনুযায়ী দাম পরিবর্তন হয়)
Contact : – +91 9851 166076 (Bikram Rai / Bisesh Homestay